বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৭ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
টেকনাফ ছাড়াও এবার নতুন করে উখিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ চকরিয়ায় জেলা পরিষদের জমিতে নির্মিত আওয়ামী লীগের অফিস উচ্ছেদ সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটি গঠণ সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে কক্সবাজার শহরে এসে সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসির সড়ক অবরোধ পাহাড়ী আস্তানা থেকে মালয়েশিয়া পাচারকালে শিশুসহ ৩১ জন উদ্ধার, দুই দালাল আটক সাবের মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর পিএস ফিরোজ কক্সবাজারে গ্রেপ্তার মিয়ানমারের বাঘগুনা খালের পাশে রয়েছে নিমার্ণ সামগ্রী ও দুইটি ট্রলার, মাঝি-মাল্লা সহ ১১ জনের হদিস নেই মিয়ানমারের উপজাতি সম্প্রদায়ের ৬৫ নাগরিকের অনুপ্রবেশ চকরিয়ায় কিশোরকে ছুরিকাঘাত : আটক ৪ চকরিয়ায় ফেরিওয়ালার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

মুজিববর্ষে নামে ১০ হেক্টর সামাজিক বনায়ন দখল করে প্লট বিক্রি

বিশেষ প্রতিবেদক : মুজিববর্ষ উপলক্ষে ‘ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের আশ্রয়ণ’ প্রকল্পের নামে কক্সবাজার সদরের খুরুশকূলে বনবিভাগের সামাজিক বনায়নের বাগান জবরদখল করে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।

এ নিয়ে উপকারভোগী লোকজনের আবেদনের প্রেক্ষিতে সামাজিক বনায়নের জায়গা জবরদখল মুক্ত করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

তবে এ ব্যাপারে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বনবিভাগের সামাজিক বনায়নের জায়গায় মুজিববর্ষের উপলক্ষে কোন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যদি জবরদখলকারি কেউ এটি প্রচার করে থাকে তা মিথ্যা। এ নিয়ে ভূক্তভোগীরা চাইলে আইনের ব্যবস্থা নিতে পারে।

বনবিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কক্সবাজার সদর উপজেলায় খুরুকূল মৌজার আরএস ৪১৬০ ও বিএস ৪৪৬৬ নম্বর খতিয়ানের বনবিভাগের পিএমখালী রেঞ্জের খুরুশকূল বিটের ১০ হেক্টর জায়গায় সামাজিক বনায়ন সৃজিত রয়েছে। যা স্থানীয় ২৫ জন উপকারভোগীর নামে ১০ বছর মেয়াদে চুক্তিমুলে গত ২০১৯ সালের ১ জুলাই বরাদ্ধ দেয়া হয়। সেই থেকে উপকারভোগীরা সামাজিক বনায়নের বাগান ভোগদখলে রয়েছে।

সরেজমিন খুরুশকূল ইউনিয়নের তেতৈয়া এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বনবিভাগের সামাজিক বনায়নের বাগানের গাছ কেটে নির্মাণ করা হয়েছে পলিথিন ও বাঁশের ঘেরাবেড়া দিয়ে ছোট ছোট বেশ কিছু ঝুপড়ি ঘর। ‘মুজিববর্ষের অঙ্গিকার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার; ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের আশ্রয়ণ’ লিখা সম্বলিত ব্যানার টাঙ্গিয়ে নির্মিত প্রতিটি ঘরে স্থাপন করা হয়েছে। ব্যানারে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার পাশাপাশি স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানের ছবিও শোভা পাচ্ছে। এছাড়া ব্যানারে সৌজন্যে মো. কামাল উদ্দিন কামাল নামের স্থানীয় এক আওয়ামী লীগের নেতার ছবিও ব্যবহার করা হয়েছে।

বনবিভাগের সামাজিক বনায়নের ওই বাগানে ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে অন্তত শতাধিক ব্যানার সম্বলিত ঝুপড়ি ঘর।

সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী খুরুশকূল ইউনিয়নের তেতৈয়া দক্ষিণ পাড়ার আবুল হোছাইনের ছেলে রফিক আহমদ অভিযোগ করে বলেন, খুরুশকূল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় ইউপি সদস্য শেখ কামালের নেতৃত্বে একটি দখলবাজ চক্র সামাজিক বনায়নের গাছপালা কেটে ফেলে জবরদখলে নেমেছে। এখন জায়গাগুলো মুজিববর্ষ উপলক্ষে ‘ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের’ নামে বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি শুরু করেছে।

“ কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের খুরুশকূল মৌজায় গড়ে উঠা ১০ হেক্টর সামাজিক বনায়নের বাগান ১০ বছর মেয়াদে ২৫ জন উপকারভোগীর নামে বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। এখন স্থানীয় ইউপি সদস্য শেখ কামালের নেতৃত্বে একটি চক্র প্রতিটি পরিবারের কাছ থেকে ২০/২৫ হাজার টাকা আদায় করে বিভিন্ন জনকে জোরপূর্বক দখল দিচ্ছে। ”

ভূক্তভোগী এ উপকারভোগী বলেন, “ সামাজিক বনায়নের জায়গা দখল করে ঘর নির্মাণের বিষয়ে উপকারভোগীরা বাঁধা দিলে স্থানীয় ইউপি সদস্য জানিয়েছেন, সরকারের সিদ্ধান্তে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তুলে বরাদ্ধ দেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে বনবিভাগের সাথে উপকারভোগীদের মধ্যে চুক্তির ভিত্তিতে বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে জানানোর পর সংঘবদ্ধ চক্রটি জবরদখল অব্যাহত রেখেছে। ”

রফিক আহমদ বলেন, চুক্তির ভিত্তিতে বরাদ্ধ দেয়া সামাজিক বনায়নের বাগান ধ্বংস করে ঘর নির্মাণ করে দখলের বিষয়টি ইতিমধ্যে বনবিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া এ ব্যাপারে গত ৮ এপ্রিল হাইকোর্টে উপকারভোগীরা রিট আবেদন করেছেন।

এর প্রেক্ষিতে সোমবার ( ১২ এপ্রিল ) বনবিভাগের ওই জায়গায় জবরদখল মুক্ত রাখা ও অন্য যে কোন ধরণের স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ রাখতে হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছেন বলে জানান সামাজিক বনায়নের এ উপকারভোগী।

সামাজিক বনায়নের জায়গায় দখল করে স্থাপনা নির্মাণের সাথে নিজের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন খুরুশকূল ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শেখ কামাল।

শেখ কামাল বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কারণে উচ্ছেদ হওয়া ৯৭ টি পরিবারকে আশ্রয় দিতে প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়েছে। কক্সবাজার সদরের সহকারি কমিশনার (ভূমি) নিজে এসে পরিমাপ করে এসব পরিবারকে আশ্রয় দেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছেন। শুধুমাত্র স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে উপস্থিত ছিলেন।

তবে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের পুনর্বাসন করে টাকা আদায়ের অভিযোগটি সত্য নয় এবং এ ধরণের ঘটনার সাথে তিনি জড়িত নন বলে জানান স্থানীয় এ ইউপি সদস্য।

এদিকে সামাজিক বনায়নের বাগানের গাছপালা কেটে নির্মিত ঝুপড়ি ঘরে টাঙ্গানো ব্যানারে নাম উল্লেখ থাকার ব্যাপারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. কামাল উদ্দিন কামাল বলেন, এতে তার কোন হাত নেই। ঝুপড়ি ঘর নির্মাণকারি স্থানীয় কিছু ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার নিজেরাই স্ব-উদ্যোগী হয়ে ব্যানারে তার নাম ব্যাবহার করেছে।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. তহিদুল ইসলাম বলেন, জবরদখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা জায়গাটি খাস খতিয়ানভূক্ত নয়। জায়গাটি বনবিভাগের ভোগদখলেই আছে। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে বাগান সৃজিত রয়েছে।

সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী গত ২০১৯ সালের ১ জুলাই খুরুশকূল মৌজার ১০ হেক্টর জায়গার সামাজিক বনায়ন দেখভাল ও ভোগদখলের জন্য স্থানীয় ২৫ জন উপকারভোগীর সঙ্গে বনবিভাগের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে বলে জানান বনবিভাগের এ বিভাগীয় কর্মকর্তা।

তহিদুল বলেন, খুরুশকূলের তেতৈয়ায় ২৫ জন উপকারভোগীর ভোগদখলে থাকা বাগান ধ্বংস করে জবরদখল পূর্বক কতিপয় ব্যক্তি বিশেষ জবরদখল করছে বলে অভিযোগ পেয়েছেন। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিধি অনুসারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি নির্মিত স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হবে।

তবে ঘটনায় সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীরা জবরদখলকারিদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে দায়ের করা রিটের আদেশের কপিটি হাতে আসার পরই বিভাগীয় কার্যক্রম হাতে নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে কক্সবাজার বিমানবন্দরের সম্প্রসারণের কারণে উচ্ছেদ হওয়া ৯৭ টি পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য বনবিভাগের সামাজিক বনায়নের জায়গায় পরিমাপ করে কোন সীমান নির্ধারণ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন সদর উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) নু-এমং মারমা মং।

নু-এমং বলেন, বিমানবন্দর সম্প্রসারণ কাজের কারণে উচ্ছেদ হওয়া ৪ শতাধিক পরিবারকে খুরুশকূল মৌজার হামজার ডেইল এলাকায় খাস খতিয়ানভূক্ত জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এতে আরো ৯৭ টির পরিবারকে পুনর্বাসন করা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। এদের পুনর্বাসনের বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

তবে বনবিভাগের সামাজিক বনায়ন ধ্বংস করে জবরদখলের অভিযোগ উঠা জায়গাটি খাস খতিয়ানভূক্ত নয় বলে জানান এ সহকারি কমিশনার (ভূমি)।

নু-এমং জানান, বিমানবন্দর সম্প্রসারণ কাজের কারণে উচ্ছেদ হওয়া ৯৭ টি পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য খুরুশকূলের তেতৈয়ায় সামাজিক বনায়নের জায়গা পরিমাপ করে সীমানা নির্ধারণ এবং দখল বুঝিয়ে দেয়ার বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য শেখ কামালের বক্তব্য সঠিক নয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888